মানব অঙ্গসংস্থানবিদ্যা
The skeleton
The nervous system
সামগ্রিক অঙ্গসংস্থানবিদ্যা (একে ইংরেজিতে Topographical anatomy, Regional anatomy বা Anthopotomy-ও বলে) হলো খালি চোখে দৃশ্যমান দৈহিক গাঠনিক পাঠ। আর আণুবীক্ষনিক অঙ্গসংস্থানবিদ্যা মানবদেহের আণুবীক্ষনিক গঠন-কাঠামো বিষয়ক পাঠ: কলাবিদ্যা (Histology) তথা কলার গঠন সংক্রান্ত পাঠ[১] এবং কোষবিদ্যা (Cytology) তথা কোষের গঠন সংক্রান্ত পাঠ এর অন্তর্ভূক্ত।
বিবর্তনবাদে এদের মূল নিহিত থাকার ফলে ভ্রুণবিদ্যা (Embryology), তুলনামূলক অঙ্গসংস্থানবিদ্যা (Comparative anatomy), তুলনামূলক ভ্রুণবিদ্যা (Comparative embryology)[১] -এর সঙ্গে মানব অঙ্গসংস্থানবিদ্যা নিবিড়ভাবে জরিত।
সকল প্রাণীর মতই মানবদেহ কতগলো তন্ত্রের সমন্বয়ে গঠিত, যেগুলির প্রতিটি আবার কতগুলো অঙ্গ দ্বারা গঠিত। এই সকল অঙ্গ অনেকগুলো কলা দ্বারা তৈরি এবং কলা সমূহ বহু সংখক কোষ ও ধাত্রের সমন্বয়ে গঠিত।
সময়ের আবর্তে বিরামহীনভাবে অন্ত্রগুলোর কাজ ও দেহের গঠনকে অনুধাবন করা মধ্য দিয়ে অঙ্গসংস্থানবিদ্যার ইতিহাস এগিয়েছে। গবেষণা পদ্ধতিরও নাটকীয় উন্নতি হয়েছে ২০শ শতকে; প্রাণীদেহ পরীক্ষার ক্ষেত্রে মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদ হতে প্রযুক্তিগতভাবে আরও জটিল পদ্ধতির উদ্ভব ঘটেছে।
পরিচ্ছেদসমূহ
শিক্ষা
সাধারণত মেডিকেল ছাত্র, ফিজিওথেরাপিষ্ট, নার্স, প্যারামেডিক এবং জীববিজ্ঞানের কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ের ছাত্ররা অঙ্গসংস্থানগত মডেল, কঙ্কাল, পাঠ্যবই, ছবি, লেকচার ও টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে সামগ্রিক অঙ্গসংস্থানবিদ্যা ও আণুবীক্ষণিক অঙ্গসংস্থানবিদ্যা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে থাকে। মাইক্রস্কোপের নিচে হিস্টোলোজিক্যাল প্রিপারেশন (বা স্লাইড) পর্যবেক্ষন আণুবীক্ষণিক অঙ্গসংস্থানবিদ্যা (বা কলাতত্ত্ব) শিক্ষায় সহায়তা করে থাকে। জীবন্ত মানুষের উপর অস্ত্রোপচার না করলে খালি বাহ্যিক অঙ্গসংস্থান (surface anatomy) দেখা সম্ভব। অধিকন্তু, মেডিকেল ছাত্ররা মৃত মানবদেহ (Cadaver ক্যাডেভার) পরীক্ষণ ও ব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে সামগ্রিক অঙ্গসংস্থানবিদ্যা পাঠ নিয়ে থাকে। অঙ্গসংস্থানবিদ্যার পরিপূর্ণ ও কার্যকর জ্ঞান থাকা সকল চিকিৎসকের জন্য অত্যাবশ্যকীয়, বিষেশত সার্জন এবং ডায়াগনস্টিক স্পেশালিষ্ট হিসাবে কর্মরত চিকিৎসকগণের জন্য, যেমন- হিস্টোপেথোলজী ও রেডিওলোজী।মানব এ্যানাটমী, ফিজিওলোজী এবং বায়োকেমিস্ট্রি হলো বুনিয়াদি চিকিৎসা বিজ্ঞান। সাধারণত মেডিকেল স্কুলগুলোতে ছাত্রদেরকে এই বিষয়গুলো প্রথম বছরে পড়ানো হয়। মানব এ্যানাটমী আঞ্চলিক বা তন্ত্র আনুসারে পড়ান হয়[১], অর্থাৎ দেহের বিভিন্ন অঞ্চলানুসারে এ্যানাটমী শেখা যেমন মাথা ও বুক অথবা নির্দিষ্ট তন্ত্র অনুসারে অধ্যয়ন যেমন স্নায়ুতন্ত্র বা শ্বসনতন্ত্র। প্রধান এ্যানাটমীর পাঠ্যবই, গ্রে’স এ্যানাটমী, আধুনিক শিক্ষাদান পদ্ধতি অনুসরন করে সাম্প্রতিককালে তান্ত্রিক বর্ণনা হতে আন্ঞ্চলিক বর্ণনা ধারায় রূপান্তরিত হয়েছে।[২][৩]
আঞ্চলিক বিভাগ সমূহ
- মস্তক(মাথা, Head) ও গ্রীবা (গলা, Neck)- "থোরাসিক ইনলেট" (অর্থাৎ বক্ষের প্রবেশপথ)-এর উপরের সবকিছু। বক্ষের প্রবেশপথ দুপাশে প্রথম পিঞ্জরাস্থি (পাঁজর), পিছনে প্রথম বক্ষ কশেরুকা ও সামনে স্টার্নাম দিয়ে ঘেরা ।
- উর্ধ্ববাহু (উর্ধাঙ্গ, Upper limb)- এতে আছে হাত, কব্জি, কলাচী, কনুই, বাহু এবং স্কন্ধ (কাঁধ)।
- বক্ষ (বুক, Thorax)- থোরাসিক ইনলেট হতে মধ্যচ্ছদা (থোরাসিক ডায়াফ্রাম) পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা।
- উদর (পেট, (Abdomen)- মধ্যচ্ছদা (থোরাসিক ডায়াফ্রাম) হতে শ্রোণীচক্রের উপরের কানা (পেলভিক ব্রিম বা পেলভিক ইনলেট পর্যন্ত সবকিছূ।
- পৃষ্ঠ(পিঠ, Back)- মেরুদণ্ড ও তার অংশসমূহ, কশেরুকা (vertebrae) এবং আন্তঃকশেরুকীয় চাক্তি (inter vertebral disks) ও মেরুদণ্ডের দুপাশের পেশী (paraspinal muscles) ও তাদের আনুষঙ্গিক অংশ সমূহ।
- পেলভিস ও পেরিনিয়াম- পেলভিস হলো পেলভিক ইনলেট হতে পেলভিক ডায়াফ্রাম পর্যন্ত অংশ। পেরিনিয়াম হলো যৌনাঙ্গ ও পায়ু-এর মধ্যবর্তী অঞ্চল।
- নিম্নবাহু (নিম্নাঙ্গ, Lower limb)- ইঙ্গুইনাল লিগামেন্ট (অর্থাৎ কুঁচকি)-এর নিচ হতে সবকিছু; এতে নিতম্ব (পাছা, buttock), উরু(থোরা, thigh), জানু (হাঁটু, knee), জঙ্ঘা (পায়ের হাঁটু থেকে গোড়ালি অবধি অংশ, Shin), পদগ্রন্থি (গোড়ালি, ankle) এবং পদতল (পায়ের পাতা, feet) অন্তর্ভূক্ত।
প্রধান অন্ত্র তন্ত্র
- সংবহন তন্ত্র: হৃৎপিন্ড ও রক্তনালীর সাহায্যে রক্ত সারা দেহে সঞ্চালিত হয়।
- লসিকাতন্ত্র: কলা ও রক্ত প্রবাহের মধ্যে লসিকা (লিম্ফ) আদান-প্রদানের কজে নিয়োজিত, যা লসিকা এবং লসিকাগ্রন্থি ও লসিকানালী দ্বারা সম্পন্ন হয়; এর সাথে অনাক্রম্যতন্ত্র (প্রতিরক্ষাতন্ত্র)ও জড়িত যা শ্বেতকনিকা, টনসিল, এ্যাডেনয়েড, থাইমাস ও প্লীহা (স্প্লিন) এর সাহায্যে রোগ সৃষ্টিকারী বস্তুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে।
- পরিপাকতন্ত্র: লালাগ্রন্থি, ইসোফেগাস, পাকস্থলী, যকৃৎ, পিত্তথলি, অগ্ন্যাশয়, অন্ত্র (ইন্টেস্টাইন) সমূহ, মলাশয় ও পায়ু দ্বারা খাদ্য পরিপাক ও প্রক্রিয়াজাত করা হয়।
- অন্তঃক্ষরা তন্ত্র: অন্তঃক্ষরা (এন্ডক্রাইন) গ্রন্থিসমূহ যেমন- হাইপোথেলামাস, পিটুইটারী, পিনিয়াল বডি, থাইরয়েড, প্যারাথাইরয়েড এবং অ্যাড্রেনাল গ্রন্থিসমূহ, হতে উৎপন্ন হর্মোন দ্বারা দেহের বিভিন্ন কার্যাদি সম্পন্ন হয়।
- আচ্ছাদন তন্ত্র: ত্বক, চুল, নখ।
- পেশীতন্ত্র: পেশীর সাহায্যে নড়াচড়া করা হয়।
- স্নায়ুতন্ত্র: মস্তিষ্ক, মেরুদন্ড, প্রান্তদেশীয় স্নায়ু ও স্নায়ু সমূহের দ্বারা তথ্য সংগ্রহ, প্রেরন ও প্রক্রিয়াকরন করা হয়।
- প্রজননতন্ত্র: যৌনাঙ্গ সমূহ।
- শ্বসনতন্ত্র: শ্বাস-প্রশ্বাসের অন্ত্র সমূহ- ফ্যারিংক্স, ল্যারিংক্স, ট্রাকিয়া, ব্রংকাই, ফুসফুস এবং মধ্যচ্ছদা।
- কঙ্কালতন্ত্র: হাড়, তরুনাস্থি, লিগামেন্ট ও টেন্ডনের মাধ্যমে দৈহিক গঠন ও প্রতিরক্ষার কাজে নিয়জিত।
- রেচনতন্ত্র: তরল ভারসাম্য, ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য ও মুত্র নিষ্কাশনের কাজ বৃক্ক (কিডনি), গবিনী (ইউরেটার), মুত্রথলি এবং মূত্রনালী (ইউরেথ্রা) করে থাকে।
উপরিগত শারীরস্থান
সুপারফিশিয়াল এ্যানাটমী বা সারফেস এ্যানাটমী মানব অঙ্গসংস্থানবিদ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যার সাহায্যে দেহের পৃষ্টতল হতে এ্যানাটমীকাল ল্যান্ডমার্কগুলোকে সহজেই চেনা যায়।[১] সুপারফিশিয়াল এ্যানাটমীর জ্ঞান দ্বারা চিকিৎসকগণ কোন অন্ত্রের অবস্থান ও সহযোগী অন্যান্য বস্তু সমূহের এ্যানাটমী সম্বন্ধে ধারণা লাভ করেন।সাধারনে পরিচিত মানবদেহের অঙ্গ সমূহের প্রচলিত নাম সমূহ (নিম্নগামী):
- মাথা —কপাল — চোয়াল — মুখ — গাল — থুতনী
- ঘাড় — কাঁধ
- বাহু — কনুই — কবজি — হাত — আঙ্গুল — বৃদ্ধাঙ্গুলি
- শিরদাড়া — বুক — বুকের খাঁচা
- পেট — কুঁচকি
- কটি — নিতম্ভ — পা — ঊরু — হাঁটু — পায়ের গুল — গোড়ালি — গুল্ফ — চরণ — পদাঙ্গুলি
- চোখ, কান, নাক, মুখগহব্বর, দাঁত ও জ্বিহবা, গলা ও কন্ঠমণি, স্তন, পুং জননেন্দ্রিয়, মুষ্ক, ভগাঙ্কুর ও যোনি, এবং নাভিও দেখা যায়।
দেহাভ্যন্তরস্থ অন্ত্র সমূহ
দেহাভ্যন্তরস্থ অন্ত্র সমূহের সাধারণ নাম:এ্যাড্রেনাল গ্রন্থি—এ্যাপেন্ডিক্স—মুত্রথলী—মস্তিষ্ক—চোখ—পিত্তথোলী—হৃৎপিন্ড— ইন্টেস্টাইন সমূহ—বৃক্ক—যকৃৎ—ফুসফুস— ইসোফেগাস —ডিম্বাশয়—অগ্নাশয়—প্যারাথাইরয়েড—পিটুইটারী—প্রসটেট—স্প্লিন—পাকস্থলী—অন্ডকোষ—থাইমাস—থাইরয়েড—শিরা—গর্ভাশয়
মস্তিষ্ক
মূল নিবন্ধ: মানব মস্তিষ্ক
অ্যামিগডালা—ব্রেইন স্টেম—সেরিবেলাম—সেরিব্রাল কর্টেক্স—লিমবিক সিস্টেম—মেডুলা—মধ্যমস্তিষ্ক—পন্সআরও দেখুন
তথ্যসূত্র
- "Introduction page, "Anatomy of the Human Body". Henry Gray. 20th edition. 1918"।
|accessyear=
প্যারামিটার অজানা, উপেক্ষা করুন (সাহায্য);|accessdaymonth=
প্যারামিটার অজানা, উপেক্ষা করুন (সাহায্য) - "Publisher's page for Gray's Anatomy. 39th edition (UK). 2004. ISBN 0-443-07168-3"।
|accessyear=
প্যারামিটার অজানা, উপেক্ষা করুন (সাহায্য);|accessdaymonth=
প্যারামিটার অজানা, উপেক্ষা করুন (সাহায্য) - "Publisher's page for Gray's Anatomy. 39th edition (US). 2004. ISBN 0-443-07168-3"।
|accessyear=
প্যারামিটার অজানা, উপেক্ষা করুন (সাহায্য);|accessdaymonth=
প্যারামিটার অজানা, উপেক্ষা করুন (সাহায্য)
- "Anatomy of the Human Body". 20th edition. 1918. Henry Gray. In public domain.
Comments
Post a Comment